

কামরুল ইসলাম বাবু :
আমি চিরতরে দূরে চলে যাবো,
তবু আমারে দেবো না ভুলিতে'-
কাজী নজরুল ইসলামের এ গানের কথা যেন চিরন্তন বানী। ১২ ভাদ্র শনিবার ছিল জাতীয় কবির ৪৬তম প্রয়াণ দিবস। প্রেম ও দ্রোহের কবি হয়ে তিনি তাঁর গানের চরণের মতোই বাংলা ভাষাভাষীর হৃদয়ে বেঁচে আছেন; থাকবেন।
বাংলা সাহিত্যে রাউজান কে স্থান করে দিলেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজুরুল ইসলাম। তিনি দু’রাত কাটিয়েছেন এই উপজেলার হাজীবাড়ীতে।
১৯৩৩ সালে ৩য় বার চট্টগ্রাম আসেন কবি নজরুল ইসলাম। তখন রাউজানে তরুণ কনফারেন্স ও শিক্ষা সম্মিলনীতে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন। টিকিট কেটে কবিকে দর্শন করেছিলেন উৎসুক জনতা।
রাউজান জলিলনগর বাসস্ট্যান্ড হতে আধা কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে ডেউয়াপাড়া হাজী বাড়ি। এই হাজী বাড়িতে ১৯৩৩ সালের ৫ ও ৬ মে এই দুইদিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের জন্য হাজীবাড়ির উত্তর পাশে ধানি জমির মাঠে রায়মুকুট দীঘির পূর্বপাড়ে বিশাল প্যান্ডেল করা হয় বাঁশের খুঁটি, ছনের ছাউনি দিয়ে। প্যান্ডেল তৈরিতে সময় লেগেছিল একমাস। রাউজানবাসী কবি নজরুলকে ‘কাজী দা’ নামে ডাকতেন। ৫ মে সকালে নৌকায় করে হালদা নদী পার হয়ে রাউজানে এলে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে কবিকে হাজী বাড়ি নিয়ে আসা হয়। কবি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন হারমোনিয়াম ও বাঁশি। পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি, ধুতি, সাদা গান্ধী টুপি ও জুতা।
প্রথম দিন আলোচনা শেষে বিকাল ৪টার পর কবি তাঁর কবিতা আবৃত্তি করেন। এরপর গেয়েছেন ইসলামিক গান। প্রথমদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার খান বাহাদুর আবদুল মোমেন। শিক্ষা সম্পর্কে ড. এনামুল হক স্বাগত ভাষণ দেন। সবগুলো সভাতেই হাবীবুল্লাহ্ বাহার, মাহবুবুল আলম, আবুল ফজল, নজীর আহমদ চৌধুরী, কবি আব্দুল কাদির প্রমুখ ভাষণ দেন। সম্মেলন ও অনুষ্ঠানের সামগ্রিক দায়িত্বে ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট অলী মিয়া চৌধুরী, মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, বদিউর রহমান সওদাগর প্রমুখ। এতে সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম তার ‘শাশ্বত সৈনিক’ প্রবন্ধটি পড়ে শোনান।
দ্বিতীয় দিন প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেওয়ার পর কবি হারমোনিয়াম বাজিয়ে গেয়েছিলেন-
‘বাজল কিরে ভোরের সানাই
নিদমহলের আঁধার পুরে।
শুনছি আজান গগনতলে
অতীত রাতের মিনার চুড়ে’।
দ্বিতীয় দিনের সভাপতি ছিলেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। উদ্বোধনী ভাষণ দেন যথারীতি ড. এনামুল হক।
৭ মে, তৃতীয় দিন নজরুলের বিদায় বেলায় সকালে প্রায় ২০০ জন লোক পায়ে হেঁটে সত্তারঘাট পর্যন্ত (বর্তমানে হালদা ব্রিজ) তাঁকে দিয়ে আসেন। কবি যান টেক্সিতে করে অন্যদের সাথে। পথিমধ্যে গহিরাবাসী যুবকেরা টেক্সি থেকে নামিয়ে গহিরা স্কুলে তাৎক্ষণিক সংবর্ধনা দেয়। এখানে ‘কাণ্ডারী হুঁশিয়ার’সহ বেশ কয়েকটি গান গেয়ে শোনান কবি।
উপরে টিন দেয়া যে কাচারীঘরে কবি দুই রাত কাটিয়ে গেছেন তা এখন আর নেই।
কবি নজরুলের এ স্মৃতি কে ধরে রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হাজী বাড়ির প্রাইমারি স্কুলের সামনে স্থাপিত হয়েছে নজরুল স্মৃতিফলক। হাজী বাড়ী এখন কবি তীর্থ হিসাবে পরিচিত।
সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি, মানব মুক্তির কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব।

-
02/02/2023 125
-
02/02/2023 72
-
02/02/2023 209
-
02/01/2023 170
-
01/28/2023 78
-
09/19/2022 1413
-
12/19/2022 1053
-
07/12/2022 897
-
12/01/2022 763
-
08/17/2022 762
ফিচার নিউজ

রাউজান সংবাদ

জাতীয়

সাহিত্য

রাউজান সংবাদ

আন্তর্জাতিক
ফটো গ্যালারি


LEAVE A COMMENT