মীর আসলাম(রাউজাননিউজ).
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের হাতে বন্দীদশা থেকে দীর্ঘ ১১মাস পর দেশে ফিরেছেন রাউজানের আবু তৈয়ব। তার সাথে সেখান থেকে এসেছেন আরো পাঁচ বাংলাদেশী। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় তারা আসেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে। আবু তৈয়র ঢাকা বিমান বন্দর থেকে বিকেল সাড়ে ৫টায় তার চিকদাইর বাড়িতে পৌঁছলে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যে আনন্দশ্রু বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। জানা যায় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক ও বিমানবন্দরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার সহায়তায় তাদের জরুরি সহায়তা দেয় ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ওমান থেকে ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কোম্পানীর চাকরির সুবাধে ভিসা নিয়ে সমুদ্রপথে অন্যদের সাথে তারা সৌদি আরব যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ইয়েমেন উপকূলে তাদের জাহাজটি ঝড়ের কবলে আটকে পড়ে সাগর উপকুলে। সেখানে তারা পড়েছিল থেকে হুতি বিদ্রোহীদের হাতে। এই ঘটনার পর প্রায় ১১ মাস ধরে জাহাজে আরোহীরা ইয়েমেনে বন্দি ছিলেন। চিকদাইর ইউনিয়নের দক্ষিণ সর্তা গ্রামের কাদের বক্সের পুত্র আবু তৈয়ব ছাড়াও সেখানে বন্দি ছিলেন দারোগা হাটের বামণসুন্দর গ্রামের মো. আলমগীর, মাদবরহাট এলাকার মো. আলাউদ্দিন, ভরদ্বাজহাট এলাকার পূর্বদুর্গাপুর গ্রামের মো. ইউসূফ ও মো. রহিম উদ্দিন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান জানান, গত ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ওমান থেকে সৌদি আরবে যাচ্ছিল তিনটি জাহাজ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে একটি জাহাজ ইয়েমেন সাগরে ডুবে যায়। বাকি ২টি জাহাজের মাধ্যমে প্রাণে রক্ষা পেয়ে তারা ইয়েমেনের বন্দরে নেমে আশ্রয় প্রার্থনা করলে হুতিরা তাদের আটক করে। পরে আটক ব্যক্তিদের দেশে থাকা পরিবারের সদস্যরা জুনে তাদের উদ্ধারের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করে। পরে আটক বাংলাদেশিরা ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ শুরু করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তারা বিষয়টি কুয়েত, ওমান ও জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করে। এর ধারাবাহিকতায় তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা সক্ষম হয়।
জানা যায় পাঁচ বাংলাদেশিরা ছাড়াও ওই ঘটনায় ১৪ ভারতীয় নাবিকও বন্দি ছিলেন। ভারত সরকারও এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়ে নিজেদের নগরিকদের ফিরিয়ে নিয়েছে। জীবন যুদ্ধে জয়ী রাউজানের আবু তৈয়ব যায়যায়দিনকে বলেছেন পরিবারে সচ্চলতার আশায় ১৯৯৬ সালে বৈধভাবে সুলতান অ্যান্ড সুলতান মুহাম্মদ কোম্পানির অধীনে ওমানে পাড়ি জমিয়েছিলাম। সবকিছু ভালোই চলছিল। ২০১৭ সালে ২১ আগস্ট দেশে এসে এক মাস অবস্থান করে পুনরায় ওমান চলে যান। চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি চাকরির সুবাধে কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় ভিসাযুক্ত পাসপোর্টসহ ৩টি জাহাজে করে অনেকের সাথে আমরা পাঁচ বাংলাদেশিও সৌদি আরবের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম। সৌদি সমীন্তবর্তী ইয়েমেনের কাছে পৌঁছলে ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের বহনকারী ডানা-৬ নামে জাহাজটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া জাহাজে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করে অন্য জাহাজে তোলা হয়। এর পর জাহাজটি ইয়েমেনে নোঙর করে। তখন সে দেশের বিদ্রোহীরা জাহাজের সবাইকে আটক করে নিয়ে যান।
১১ মাস পরে তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন মৃত্যুর পথযাত্রি থেকে দেশে ফিরে মা ও সন্তানকে দেখে নিজের আনন্দ অশ্রু ধরে রাখতে পাচ্ছি না। প্রাবাসী আবু তৈয়বের মা রাবেয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে ফিরে পাব সেটা কল্পনাও করিনি। মৃত্যুর আগে ছেলের মুখটা দেখলাম এর চাইতে শান্তির আর কিছুই নেই।#
Add comment