কামরুল ইসলাম বাবু :
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ৬ অক্টোবর মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সাব ষ্টেশন ও ব্রিজের কাছে থাকা হানাদার বাহিনীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালিত অভিযানে প্রতিপক্ষের গুলিতে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুল মান্নান বীর বিক্রমের কবর রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের আবুরখীল থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

২৩ নভেম্বর সোমবার শহীদ মান্নানের কবর দেখতে জেলা পুলিশের অনুমতি নিয়ে আবুরখীল আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকার একটি দল। তাদের সাথে কবর এলাকায় যান রাউজান ও হাটহাজারী এলাকার কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। সাথে ছিলেন রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল এর সহকারি পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম ও রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন।
পরিদর্শনে আসা দলের সদস্য ও পুলিশ কর্মকর্তাগণ বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে দোয়া পাঠ ও মুনাজাত করেন। পরিদর্শক দলে থাকা কবর স্থানান্তরের উদ্যোক্তা শহীদ আবদুল মান্নান স্মৃতি সংরক্ষণ বাস্তবায়ন পরিষদের আহবায়ক এম.এস.কে মাহাবুব জানান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা গ্রামের মানুষের দাবির পরিপেক্ষিতে নিজ গ্রামে কবর নিয়ে যেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রানালয়ে আবেদন করা হয়েছে। দুটি মন্ত্রনালয় থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। এই উদ্যোগের সাথে সক্রিয় ভাবে সহায়তা প্রদান করেছেন শেরপুর জেলা এডিশনার এসপি বলাল হোসেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনসহ জেলা পুলিশ প্রশাসন।

এসময় উপস্থিত তৎকালিন সময়ে শহীদ মান্নানের সহযোদ্ধা হাটহাজারীর বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বলেন- মদুনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংসের সেই অপারেশন ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিরাট এক সাফল্য। তবে এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে গিয়ে অপারেশনে নিজের হাতে থাকা রকেট লেঞ্চার দিয়ে অসিম সাহসিকতার সাথে ৩টি ট্রান্সপার্মার গুড়িয়ে দিয়ে হঠাত শত্রু পক্ষের গুলি মান্নানের শরীরে বিদ্ধ হলে তাঁর জীবন শংকাটাপন্ন হয়ে পড়লে তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল আবুরখীল বৌদ্ধ গ্রামে। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে এখানে ঢাকাখালী খালের পাড়ে শহীদ এই বীর যোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়েছিল। তিনি জানান এই অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ। ১৯৮১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমান বাহিনী এই কর্মকর্তা এখানে এসে কবর পরিদর্শন করে জেয়ারত করে গেছেন।
সহকারি পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান বীরবিক্রম আমাদের পুলিশ বাহিনীর গর্ব। খেতাব প্রাপ্ত ৬ পুলিশ সদস্যদের মধ্যে তিনি একজন। আজ তাঁকে সম্মান জানাতে পেড়ে নিজেকে গর্ববোধ করিছ। বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উনাকে আরও সম্মানিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উনার কবর স্থানান্তর পক্রিয়া চলছে। শীঘ্রই উনার কবর নিজ গ্রামে নবী গঞ্জে স্থানান্তর করা হবে।
পরিদর্শন কালে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন রাউজানের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসূফ খান, মুক্তিযোদ্ধা দিলীপ বড়ুয়া, সাধন পালিত, বাদল পালিত, হারুনুর রশিদ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি দুলাল বড়ুয়া, রাউজান প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক শফিউল আলম, সাংবাদিক মাহাবুব মোর্শেদ।
উল্লেখ্য যে, মদুনাঘাট অপারেশনে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় শহীদ হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের সন্তান, তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
Add comment