রাউজাননিউজ ডেক্স;
১২ জানুয়ারি মঙ্গরবার ভারত উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব মাস্টারদা সূর্য সেনের ৮৭তম প্রয়াণ দিবস। ১৯৩৪ সালের আজকের এই দিনে মধ্যরাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামী বাঙ্গালি বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেন ও তাঁর সহযোগী তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল।
এই উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারী) ১১টায় তাঁর জন্মস্থান রাউজান উপজেলা সদর মুন্সিরঘাটায় স্থাপিত মাস্টার দা সূর্যসেনের ভাস্কর্যে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর পক্ষে। এরপর রাউজান উপজেলা আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গসংগঠন সমুহ শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া উপজেলার নোয়াপাড়াস্থ তাঁর বসতভিটায় ও বিভিন্ন সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এছাড়া রাউজান রাউজান প্রেসক্লাব, সূর্য সেন স্মৃতি পাঠাগার,সেন্ট্রাল বয়েজ অব রাউজান সহ নানান সমাজিক সংগঠনের পক্ষ হতে নানান কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে এদিন। ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯৩৩ সালে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করে বিচার করা হয়েছিল বিপ্লবীদের। এই ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ছিলেন ডব্লিও ম্যাকশ। রায়বাহাদুর রাজকুমার ঘোষ ও খন্দকার আলী তৈয়ব ট্রাইব্যুনালের সদস্য ছিলেন। রায়ের আদেশে সূর্যসেন ও তারকেশ্বরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড ও কল্পনা দত্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে অত্যাচার করে। ব্রিটিশরা হাতুরী দিয়ে তাঁর দাঁত ভেঙে দেয় এবং তাঁর হাঁড় ও ভেঙে দেয়। হাতুরী দিয়ে নির্মম ভাবে পিটিয়ে অত্যাচার করা হয়। এরপর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের লাশ আত্মীয়দের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি এবং হিন্দু রীতি অনুযায়ী পোড়ানো হয়নি। ফাঁসীর পর লাশদুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টীমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মৃতদেহ দুটোকে ব্রিটিশ ক্রুজার ‘দ্যা রিনাউন’ এ তুলে নিয়ে বুকে লোহার টুকরা বেঁধে বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগরের সংলগ্ন একটা জায়গায় ফেলে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য যে, মাস্টারদা ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের এক অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দুই ছেলের নাম সূর্য ও কমল। চার মেয়ের নাম বরদাসুন্দরী, সাবিত্রী, ভানুমতী ও প্রমিলা। শৈশবে পিতা মাতাকে হারানো সূর্য সেন কাকা গৌরমনি সেনের কাছে মানুষ হয়েছেন। মাস্টারদা নামে সর্বাধিক পরিচিত ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের এই বিপ্লবীর প্রকৃত নাম সূর্যকুমার সেন। তার ডাক নাম ছিলেন কালু। তিনি তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং নিজ জীবন বলীদান করেন। এই বীর সেনানীর স্মৃতি রক্ষায় রাউজানের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী তার জন্মভুমি রাউজান উপজেলা সদরে সূর্যসেনের ভাস্কর্য স্থাপন ও মাস্টার দা স্মৃতি পাঠাগারসহ সূর্যসেন চত্বর স্থাপন করেন। প্রয়াণ দিবসে উপজেলা সদরে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম। যুবলীগ নেতা হাসান মোহাম্মদ রাসেলের পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্যামল কুমার পালিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহ আলম চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক বশির উদ্দিন খান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ,জসিম উদ্দিন ,জসিম উদ্দিন চৌধুরী, জানে আলম জনি, সওকত হোসেন। অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল লতিফ, মুছা আলম খান, যুবলীগ নেতা জিয়াউল হক রোকন, আরিফুল হক চৌধুরী, আবু ছালেক, ছাত্রলীগ নেতা জিল্লুর রহমান মাসুদ, শাখাওয়াত হোসেন পিবলু, সাইদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আসিফ,তানভির চৌধুরী, আরমান সিকদারসহ অনেকেই ।
Add comment